নড়াইল প্রতিনিধি
ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে নড়াইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনায় তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সংগঠনটির জেলা ইউনিট। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) নড়াইল জেলা শাখার মুখপাত্র নুসরাত জাহান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জেলা শাখার সদস্য সচিব মো. শাফায়াত উল্লাহ ও মুখ্য সংগঠক কাজী ইয়াজুর রহমান বাবুর নির্দেশক্রমে এ নোটিশ জারি করা হয়।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন, সংগঠনের যুগ্ম সদস্য সচিব ও জেলার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মো. আব্দুর রহমান মেহেদী, যুগ্ম সদস্য সচিব আমিরুল ইসলাম রানা ও সদর উপজেলা আহ্বায়ক মো. রাশেদুল ইসলাম মামুন।
নোটিশে বলা হয়, গত ৯ জুন সংঘটিত অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট তিন নেতাকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব না দিলে কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারে।
এছাড়াও সদর উপজেলা আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম মামুনকে ‘কেন বহিষ্কার করা হবেনা’ তা জানতে চেয়ে আগামী সাতদিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব প্রদান ব্যতিত তার সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তবে জবাব সন্তোষজনক হলে তার সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতে পারে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট :
গত ৬ জুন সংগঠনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে মো. আব্দুর রহমান মেহেদী জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে একটি সমালোচনামূলক পোস্ট দেন। পোস্টে জুলাইয়ের শহিদ, আহত ও সাধারণ মানুষের প্রতি জেলা প্রশাসককে আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানানো হয় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ছবি যুক্ত করা হয়।
পোস্টটি সংগঠনের আরেক যুগ্ম সদস্য সচিব আমিরুল ইসলাম রানা ডিলিট করে দেন এবং মেহেদীকে তিরস্কার করেন। এ নিয়ে সংগঠনের মেসেঞ্জার গ্রুপে দু’জনের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়।
এরপর ৮ জুন সংগঠনের সিনিয়র নেতারা উভয়কে ডেকে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নিলেও তারা কেউ সাড়া দেননি। উপরন্তু তারা উভয়ই মেসেঞ্জারে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করতে থাকে এবং দুই গ্রুপে মারামারি করার জন্য স্থান ও সময় নির্ধারণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ জুন শহরের পুরাতন বাস টার্মিনালে দুই পক্ষের অনুসারীরা পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন। এসময় আমিরুল ইসলাম রানা ও সদর উপজেলা আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম মামুনের ২০-৩০ জন অনুসারীদের সাথে আব্দুর রহমান মেহেদীর ৫০-৬০ জন অনুসারীর সংঘর্ষ হয়। এসময় আব্দুর রহমান মেহেদীসহ তার গ্রুপের মোট তিনজন আহত হন। অপরপক্ষে রাশেদুল ইসলাম মামুন এবং তার অনুসারী সাকিব খান ও মুমিন আহত হন।
এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে সংগঠনটির সদস্য সচিব মো. শাফায়াত উল্লাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই বিপ্লবের প্ল্যাটফর্ম। এখানে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনা ভীষণ হতাশাজনক। আমি ও সংগঠনের জেলা সংগঠক মিনহাজুল ইসলাম আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেও সংঘর্ষ থামাতে পারিনি। উভয়পক্ষই আমাদের মীমাংসার উদ্যোগকে ব্যাহত করেছে, কেউ কোনো অনুরোধ রাখেনি। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। শোকজের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
জেলা সংগঠক মিনহাজুল ইসলাম বলেন, অদক্ষ, অথর্ব ও অযোগ্য ব্যক্তিরা সংগঠনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ কুক্ষিগত করে রেখেছে। তাদের হেলামির জন্যই এতবড় অঘটন ঘটেছে। যারা সংঘর্ষ করেছে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক এই কামনা করছি। তিনি আরও বলেন, আহত আব্দুর রহমান মেহেদী একজন গুলিবিদ্ধ জুলাইযোদ্ধা। জুলাই পরবর্তী প্রেক্ষাপটে পুনরায় তার আহত হওয়ার ঘটনা সত্যিই হৃদয়বিদারক। একইসাথে অপরপক্ষে রাশেদুল ইসলাম ও অন্যান্যরা আহত হওয়াটাও অনাকাঙ্ক্ষিত। আসলে হানাহানিতে কেউ লাভবান না হলেও, সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :